coinpayu

বদলী হজ্জের বিধি-বিধান ২০২৪

 

বদলী হজ্জের বিধি-বিধান

লেখকঃ মুফতী মুহাম্মদ শফী রহঃ

যার ওপর হজ্জ ফরয হয়েছে এবং সে হজ্জের মৌসুমও পেয়েছে কিন্তু সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোন কারণে হজ্জ আদায় করেনি, তারপর একসময় সে হজ্জ করতে অক্ষম হয়ে পড়েছে— তো এমন ব্যক্তির ওপর ফরয হল, সে নিজেই কাউকে পাঠিয়ে বদলী হজ্জ করাবে অথবা তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে তার পক্ষ হতে বদলী হজ্জ করানোর ওসিয়ত করে যাবে।

হজ্জ করার প্রয়োজনীয় আর্থিক সঙ্গতি অর্জনের পর কেউ যদি হজ্জের মৌসুম আসার আগেই মারা যায় তাহলে তার যিম্মা থেকে হজ্জের দায়িত্ব রহিত হয়ে যায়। সুতরাং তার জন্য আর বদলী হজ্জ করানোর ওসিয়ত করে যাওয়া জরুরী নয়।

হজ্জ করতে অক্ষম প্রমাণিত হওয়ার শর্তাবলী

হজ্জ করতে অক্ষম হওয়ার একটি অবস্থা তো উল্লেখ করা হল যে, হজ্জের সময় আসার আগেই তার ইন্তেকাল হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে তার ওপর আর হজ্জ ফরযই থাকে না। অক্ষম হওয়ার দ্বিতীয় অবস্থা হল, কেউ তাকে গ্রেফতার করে ফেলল বা জোরপূর্বক মক্কা শরীফ যেতে দিল না। তৃতীয় অবস্থা হল, সে এমন অসুখে পড়ল যে, সুস্থতার আর আশা নেই। উদাহরণত কেউ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হল, অথবা দৃষ্টিহীন কিংবা ল্যাংড়া হয়ে গেল। অথবা বার্ধক্যজনিত এমন দুর্বলতার শিকার হল যে, একা একা যানবাহনে আরোহন করতে পারে না। চতুর্থ অবস্থা হল, যাতায়াতের পথ অনিরাপদ হয়ে পড়ায় জান-মালের আশঙ্কা সৃষ্টি হল। পঞ্চম অবস্থা হল, কোন মহিলার মাহরাম সফরসঙ্গীর ব্যবস্থা হল না। এই সকল অবস্থায় এ ব্যক্তি হজ্জ করতে অক্ষম প্রমাণিত হবে। তবে শর্ত হল, এসব সমস্যা একাধারে মৃত্যু পর্যন্ত বহাল থাকতে হবে। যদি এ সকল সমস্যা মৃত্যুর পূর্বে দূরীভূত হয়ে যায় কিন্তু অতঃপর হজ্জের মৌসুম আসা সত্ত্বেও হজ্জ করার সুযোগ না হয় তাহলে বদলী হজ্জ করানো অথবা এর জন্য ওসিয়ত করে যাওয়া ওয়াজিব। আর যদি মৃত্যু পর্যন্ত এ সকল সমস্যা বহাল থাকে তাহলে ইমাম আবূ হানীফা রহ. এর প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী বদলী হজ্জের ওসিয়ত করে যাওয়া ওয়াজিব নয়। তবে শর্ত হল, সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে হজ্জের মৌসুম না পেতে হবে। কেননা ইমাম আবু হানীফা রহ. এর নিকট হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য অন্যান্য শর্তের সাথে সুস্থ অবস্থায়/সমস্যামুক্ত অবস্থায় হজ্জের মৌসুম পাওয়াও একটি শর্ত। এই শর্তটি না পাওয়ার কারণেই ফরয দায়িত্ব রহিত হয়ে গেছে। ফলে ওসিয়ত করে যাওয়া ওয়াজিব নয়। আর সাহেবাইনের মতে, আর্থিক সঙ্গতিই শুধু এমন শর্ত যে, তা না থাকলে কিংবা হজ্জের দিনগুলো আগমনের পূর্বেই তা শেষ হয়ে গেলে ফরয হজ্জের দায়িত্ব রহিত হয়ে যায়। আর অন্যান্য শর্তাবলী হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার জন্য নয় বরং হজ্জ আদায়ের জন্য। এসব শর্ত না পাওয়া গেলে ফরয হজ্জ রহিত হয় না। কিন্তু যেহেতু নিজে তা আদায় করতে সক্ষম হচ্ছে না, এজন্য শুধু নিজে আদায়ের দায়িত্ব রহিত হয় তবে তার দায়িত্বে বদলী হজ্জের ওসিয়ত করা ওয়াজিব। মুহাক্কিক ইবনে হুমাম প্রমুখ সাহেবাইনের মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এজন্য সতর্কতার দাবী হল, উক্ত সকল অবস্থাতেই বদলী হজ্জের ওসিয়ত করে যাওয়া এবং ওয়ারিশগণ কর্তৃক কাউকে দিয়ে বদলী হজ্জ করিয়ে দেয়া।

বদলী হজ্জের শর্তাবলী

যার যিম্মায় হজ্জ ফরয হয়েছে কিংবা মান্নতের মাধ্যমে যে ব্যক্তি নিজের ওপর হজ্জ অথবা উমরা ওয়াজিব করে নিয়েছে অতঃপর নিজে তা আদায় করতে অক্ষম হয়ে পড়েছে- যার বিস্তারিত বিবরণ ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে- এমন ব্যক্তির হজ্জ অথবা উমরা অন্য কারো দ্বারা বদলী হিসেবে করানোর জন্য বিশটি শর্ত রয়েছে।

প্রথম শর্ত : যার পক্ষ হতে বদলী হজ্জ করা হচ্ছে বদলী হজ্জ করানোর সময় তার উপর হজ্জ ফরয হওয়া। যদি সে সময় পর্যন্ত তার উপর হজ্জ ফরয না হয়ে থাকে, তথাপি সে বদলী হজ্জ করায় তাহলে তা নফল হজ্জ হিসেবে গণ্য হবে। অতঃপর যদি তার হজ্জ করার সামর্থ্য হয় তাহলে তার উপর হজ্জ ফরয হবে এবং পুনরায় তাকে স্বয়ং হজ্জ করতে হবে, আর নিজে না পারলে পুনরায় বদলী হজ্জ করাতে হবে।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় শর্ত : বদলী হজ্জ করানোর পূর্বেই হজ্জ করতে অক্ষম হয়ে পড়া এবং অক্ষমতা স্থায়ী হওয়া। অর্থাৎ যে সকল সমস্যার কারণে মানুষ হজ্জ করতে অক্ষম সাব্যস্ত হয়- যার বিস্তারিত বিবরণ পূর্বে আলোচিত হয়েছে- এ সকল সমস্যা মৃত্যু পর্যন্ত বহাল থাকা এবং বদলী হজ্জ করানোর পূর্ব হতেই তা বিদ্যমান থাকা। সুতরাং যদি কোন অক্ষম ব্যক্তি বদলী হজ্জ করানোর পর তার সমস্যা কেটে যায় এবং হজ্জ করতে সক্ষমতা অর্জন করে- উদাহরণত অসুস্থ ছিল অতঃপর বদলী হজ্জ করানোর পর সুস্থ হয়ে গেল, অথবা মহিলা তার সঙ্গে সফর করার মাহরাম পেয়ে গেল- তাহলে পুনরায় নিজে হজ্জ করা জরুরী হবে। এমতাবস্থায় পূর্বে করানো হজ্জটি নফল হয়ে যাবে।

চতুর্থ শর্ত : যার ফরয হজ্জটি আদায় করা হবে তার পক্ষ হতে বদলী হজ্জকারীকে আদেশ বা অনুরোধ করতে হবে কিংবা নিদেনপক্ষে অনুমতি দেয়া হবে। যদি তার আদেশ বা অনুমতি ছাড়াই কোন ব্যক্তি তার পক্ষ হতে বদলী হজ্জ করে দেয় তাহলে এই হজ্জের দ্বারা কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির ফরয হজ্জ আদায় হবে না। কিন্তু ইমাম আযম আবূ হানীফা রহ. একটি হাদীসের ভিত্তিতে বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি তার মরহুম পিতা-মাতার পক্ষ হতে অথবা অন্য কোন ওয়ারিশ কিংবা কোন ব্যক্তি তার ঘনিষ্ঠ কোন মরহুম বন্ধু-বান্ধবের পক্ষ হতে তার আদেশ ও ওসিয়ত ব্যতিরেকেই বদলী হজ্জ করে দেয় তাহলে ইনশাআল্লাহ মরহুম ব্যক্তি ফরয হজ্জের দায় থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ (আল্লাহ যদি চান) কথাটি এজন্য বলেছেন যে, কুরআন-সুন্নাহর কোন সুস্পষ্ট বাণী দ্বারা এটা আদায় হওয়া সরাসরি প্রমাণিত নয়।

পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শর্ত : বদলী হজ্জ আদায়কারী ব্যক্তি মুসলমান হওয়া, বোধ-বুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া, পাগল না হওয়া, নাবালেগ হলে বোধজ্ঞান সম্পন্ন হওয়া অর্থাৎ হজ্জ আদায় এবং সফরের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বুঝমান হওয়া । বোঝা গেল, হজ্জ আদায়কারী ব্যক্তি বালেগ হওয়া আবশ্যক নয়। নাবালেগও বদলী হজ্জ করতে পারে। তবে শর্ত হল, তার মধ্যে অন্তত হজ্জের কার্যাবলী সম্পন্ন করার যোগ্যতা ও সক্ষমতা থাকতে হবে। অর্থাৎ প্রায় প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। তবে কোন কোন আলেম নাবালেগের ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। এজন্য নাবালেগ দ্বারা বদলী হজ্জ না করানো উচিত

অষ্টম শর্ত : বদলী হজ্জের পারিশ্রমিক ও বিনিময় নেয়া যাবে না। যদি কেউ পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে কাউকে দিয়ে বদলী হজ্জ করায় তাহলে প্রদানকারী ও গ্রহণকারী উভয়েই গুনাহগার হবে। তবে হজ্জটি প্রেরণকারীর পক্ষ হতেই আদায় হয়ে যাবে। আর হজ্জকারীর দায়িত্বে গৃহিত বিনিময় ফেরত দেয়া ওয়াজিব হবে। অবশ্য প্রেরণকারী তাকে হজ্জ সংক্রান্ত সাধারণ খরচাদি প্রদান করতে বাধ্য থাকবে।

নবম ও দশম শর্ত : যার পক্ষ হতে বদলী হজ্জ করা হচ্ছে তার সম্পদ হতে হজ্জের ব্যয় নির্বাহ করা এবং যানবাহনের মাধ্যমে সফর করা, পায়ে হেঁটে না করা। যদি বদলী হজ্জকারী নিজ সম্পদ ব্যয় করে কারও পক্ষ হতে বদলী হজ্জ করে তাহলে এর দ্বারা ঐ ব্যক্তির ফরয হজ্জ আদায় হবে না। ব্যয়ভার নির্বাহের অর্থ হল, হজ্জের অধিকাংশ ব্যয়ভার হজ্জ করানেওয়ালার পক্ষ হতে হওয়া। তবে বদলী হজ্জকারী নিজ অর্থ হতে অল্প-স্বল্প খরচ করলে তাতে প্রেরকের হজ্জের কোন অসুবিধা হবে না। অনুরূপভাবে হজ্জকারী পদব্রজে সফর করলেও হজ্জ করানেওয়ালার ফরয হজ্জ আদায় হবে না। হজ্জের সফর যানবাহনে করার অর্থ হল অধিকাংশ সফর যানবাহনে করা। অর্থাৎ সফরের কিছু অংশ পদব্ৰজে করলে কোন অসুবিধা হবে না।

এগারোতম শর্ত : হজ্জ করানেওয়ালার আবাসভূমি হতে হজ্জের সফর শুরু করা। যদি ঐ ব্যক্তির কয়েকটি আবাসভূমি থাকে তাহলে সফর শুরু করার ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে মক্কার নিকটবর্তী আবাসভূমিটি ধর্তব্য হবে। উদাহরণত কোন ব্যক্তি হিন্দুস্তানে ইন্তেকাল করল এবং বদলী হজ্জের ওসিয়ত করে গেল। পরবর্তীতে তার পরিবারবর্গ কিংবা যাকে দিয়ে বদলী হজ্জ করানোর ওসিয়ত করে গিয়েছিল সে বা তারা দেশত্যাগ করে পাকিস্তান চলে আসল, তাহলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির কর্তব্য হল, ওসিয়তকারীর বদলী হজ্জটি হিন্দুস্তান থেকে করানোর ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ হিন্দুস্তান থেকেই কোন ব্যক্তিকে বদলী হজ্জের জন্য পাঠিয়ে দেয়া। কিন্তু কোন কারণে যদি হিন্দুস্তান থেকে কাউকে পাঠাতে সক্ষম না হয় চাই সেটা ওদেশে টাকা পাঠানো সম্ভব না হওয়ার কারণে হোক কিংবা কোন ব্যক্তিকে না পাওয়া যাওয়ার কারণে হোক— তাহলে পাকিস্তান থেকেই কাউকে বদলী হজ্জের জন্য পাঠিয়ে দিলে ইনশাআল্লাহ ওসিয়তকারীর ফরয হজ্জ আদায় হয়ে যাবে। এ মাসআলাটি যদিও ফিকহের কিতাবে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই কিন্তু এর একটি দৃষ্টান্ত বিদ্যমান আছে। যথা: মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ যদি তার আবাসভূমি থেকে হজ্জ করানোর জন্য যথেষ্ট না হয় তাহলে যে স্থান থেকে যথেষ্ট হয় সেখান থেকেই হজ্জ করিয়ে দেয়ার অনুমতি আছে। তো আমাদের আলোচ্য মাসআলায়ও দেখা যাচ্ছে, মৃত ব্যক্তির আবাসভূমি থেকে হজ্জ করানোর সক্ষমতা বিদ্যমান নেই। সুতরাং যেখান থেকে হজ্জ করানোর সক্ষমতা অর্জিত হবে সেখান থেকেই হজ্জ করিয়ে দিলে ইনশাআল্লাহ তা দায়মুক্তির জন্য যথেষ্ট হবে।

বারোতম শর্ত : বদলী হজ্জকারী ইহরাম বাঁধার সময় হজ্জের নিয়তটি যিনি হজ্জ করাচ্ছেন তার পক্ষ হতে করবে। ইহরামের সময় নিয়ত না করে থাকলে কিংবা কার পক্ষ হতে হজ্জ করা হচ্ছে তা খেয়াল না করে সাধারণভাবে হজ্জের নিয়ত করলে হজ্জের কার্যাবলী শুরু করার পূর্বে অবশ্যই নির্দিষ্ট করে হজ্জ করানেওয়ালার পক্ষ হতে বদলী হজ্জের নিয়ত করে নিতে হবে।

তেরো ও চৌদ্দতম শর্ত : যাকে বদলী হজ্জ করার জন্য বলা হয়েছে আদেশদাতার পক্ষ হতে স্বয়ং তাকেই হজ্জ করা। আদেশদাতার অনুমতি ব্যতীত অন্য কারো দ্বারা বদলী হজ্জ করানো জায়েয নেই। অনুমতি ব্যতীত অন্য কারও দ্বারা করানো হলে তা আদেশদাতার পক্ষ হতে আদায় না হয়ে নির্দেশিত ব্যক্তির পক্ষ হতে আদায় হবে এবং নির্দেশিত ব্যক্তিকে আদেশদাতার অর্থ ফেরত দিতে হবে। এ জন্য উত্তম হল, নির্দেশদাতাকে নিঃশর্ত অনুমতি দিয়ে দেয়া যাতে কোন কারণে সে নিজে যেতে না পারলে অন্য কাউকে পাঠাতে পারে। অনুরূপভাবে মৃত ব্যক্তি যদি এমনভাবে নির্দিষ্ট কারও দ্বারা বদলী হজ্জ করানোর ওসিয়ত করে যায় যে, সে ছাড়া অন্য কেউ যেন তার বদলী হজ্জ না করে, তাহলে অন্য কারও দ্বারা তার হজ্জ করানো জায়েয নেই। পক্ষান্তরে যদি কাউকে নির্দিষ্ট করে যায় পাশাপাশি অন্যদের ব্যাপারেও মানা না করে, তাহলে এ ক্ষেত্রে উত্তম তো হল নির্দিষ্ট ব্যক্তি দ্বারাই হজ্জ করানো, তবে সে যদি হজ্জ করতে অস্বীকার করে অথবা কোন কারণে অক্ষম হয়ে পড়ে তাহলে অন্য কারও দ্বারাও করানো যাবে। ঐ ব্যক্তির অস্বীকার এবং অক্ষমতা ছাড়াই যদি ওয়ারিশ বা দায়িত্বশীলগণ অন্য কাউকে হজ্জে পাঠিয়ে দেয় তাহলেও আদেশদাতার ফরয হজ্জ আদায় হয়ে যাবে। যদি বদলী হজ্জের ওসিয়তকারী শুধু এতটুকু বলে যে, আমার পক্ষ হতে যেন বদলী হজ্জ করিয়ে দেয়া হয় এবং হজ্জের জন্য কাউকে নির্দিষ্ট করে না যায় তাহলে ওয়ারিশগণ পরামর্শ করে যে কাউকে ইচ্ছা বদলী হচ্ছে পাঠাতে পারে। এতে ওসিয়তকারীর ফরয হজ্জ আদায় হয়ে যাবে।

পনেরো ও ষোলোতম শর্ত : যাকে বদলী হজ্জ করানোর জন্য পাঠানো হবে সে যেন হজ্জটি হাতছাড়াও না করে এবং নষ্টও না করে। ইহরাম বাঁধার পর উকৃফে আরাফার পূর্বে স্ত্রী সহবাস দ্বারা হজ্জ নষ্ট হয়ে যায়, আর ইহরাম বাঁধা সত্ত্বেও উকূফে আরাফা না করলে হজ্জ ফউত অর্থাৎ হাতছাড়া হয়ে যায়। হাজী সাহেব যদি হচ্ছ নষ্ট কিংবা হাতছাড়া করে দেয় তাহলে প্রেরণকারীর হজ্জ আদায় হবে না। সে ক্ষেত্রে হজ্জ বিনষ্টকারীকে প্রেরণকারীর সমুদয় অর্থ ফেরত দিয়ে দিতে হবে এবং পরবর্তী বছর হজ্জকারী নিজ অর্থ ব্যয়ে কাযা হচ্ছ আদায় করবে কিন্তু এই কাযা হজ্জটিও প্রেরণকারীর পক্ষ হতে আদায় হবে না বরং হজ্জ বিনষ্টকারীর নিজস্ব হজ্জ্ব বলে গণ্য হবে। কাজেই প্রেরণকারীকে আলাদাভাবে নিজের হজ্জ করাতে হবে। আর হজ্জ হাতছাড়াকারীর দুই অবস্থা। এক. নিজ গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে হজ্জের কোন রোকন আদায় করতে না পারা। এক্ষেত্রেও হজ্জকারীকে প্রেরণকারীর হজ্জের খাতে প্রদত্ত অর্থ ফেরত দিতে হবে এবং নিজের হাতছাড়া হজ্জের কাযা নিজ অর্থ ব্যয়ে করে নিতে হবে। এই কাযা দ্বারাও প্রেরণকারীর ফরয হজ্জ আদায় হবে না এমনকি স্বয়ং হজ্জকারীর ফরয হজ্জও আদায় হবে না। অর্থাৎ পরবর্তীতে যদি তার হজ্জ করার সামর্থ্য অর্জিত হয় তাহলে আলাদাভাবে নিজের ফরয হজ্জ আদায় করতে হবে। দুই. কোন আসমানী বালা, অসুস্থতা অথবা গ্রেফতার হওয়ার কারণে হজ্জের আরকানসমূহ আদায় করতে অক্ষম হয়ে পড়া। এমতাবস্থায় তাকে পরবর্তী বছর হজ্জের কাযা করতে হবে এবং প্রেরণকারীকে জরিমানাও দিতে হবে না। তবে পরবর্তী বছরের কাযা হজ্জ দ্বারা প্রেরণকারীর ফরয হজ্জ আদায় হতে পারে, যদি কিনা প্রেরণকারী তাকে নির্দেশ দেয় এবং এই কাযা হজ্জে প্রেরণকারীর হজ্জের নিয়ত করা হয়। 

সতেরো ও আঠারোতম শর্ত : বদলী হজ্জ আদায়কারী শুধুমাত্র একটি হজ্জের ইহরাম বাধবে। অর্থাৎ একই সময়ে নিজের ও প্রেরণকারীর পক্ষ হতে দুটি হজ্জের ইহরাম বাঁধবে না। অনুরূপভাবে একটি মাত্র বদলী হজ্জের ইহরাম বাঁধাও শর্ত। অর্থাৎ একই সঙ্গে দুই ব্যক্তির পক্ষ হতে বদলী হজ্জের নিয়ত করে ইহরাম বাঁধতে পারবে না।

উনিশতম শর্ত : হজ্জকারী ব্যক্তি হচ্ছে প্রেরণকারীর মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধবে। অর্থাৎ প্রেরণকারীর আবাসভূমি থেকে মক্কা শরীফ গমনের ক্ষেত্রে যে মীকাত পথে পড়বে সেখান থেকেই বদলী হজ্জের ইহরাম বাঁধবে। উদাহরণত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান থেকে হচ্ছে গমনকারীদের মীকাত হল ইয়ালামলাম। যদি বদলী হজ্জকারী দেশ থেকে উমরার ইহরাম বাঁধে এবং উমরা আদায়ের পর হালাল হয়ে হজ্জের সময় আবার মক্কা থেকে হজ্জের ইহরাম বাঁধে যেমনটি তামাত্তু হজ্জের সাধারণ নিয়ম- তাহলে যেহেতু হজ্জের মীকাতটি প্রেরণকারীর মীকাতের অন্তর্ভুক্ত নয় এ জন্য প্রেরণকারীর হজ্জ আদায় হবে না। ফলে প্রেরণকারীকে তার প্রদত্ত অর্থ ফেরত দেয়া হজ্জকারীর জন্য জরুরী হবে। এর বিস্তারিত বিবরণ সামনে আসছে।

বিশতম শর্ত : হজ্জে প্রেরিত ব্যক্তি প্রেরণকারীর শর্তাবলী লঙ্ঘন করতে পারবে না। উদাহরণত প্রেরণকারী তাকে হজ্জে ইফরাদ করার কথা বলেছিল, তা সত্ত্বেও সে হজ্জের সঙ্গে উমরা মিলিয়ে কিরান করে নিল তাহলে এতে প্রেরণকারীর হজ্জ আদায় হবে না। প্রেরিত ব্যক্তি যদি উমরার নিয়তও প্রেরকের পক্ষ হতে করে সে ক্ষেত্রেও ইমাম আবূ হানীফা রহ. প্রেরকের নির্দেশ লঙ্ঘন করার কারণে হজ্জটি প্রেরকের পক্ষ হতে না হওয়ার এবং তাকে তার প্রদত্ত অর্থ ফেরত দেয়ার মত ব্যক্ত করেছেন। তবে তার দুই প্রখ্যাত শাগরেদ ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ রহ. এক্ষেত্রে হজ্জটি প্রেরকের পক্ষ হতে আদায় হওয়ার অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তো ইমাম আবূ হানীফা রহ.এর মতে যেহেতু এই বিধানের ভিত্তি হল, প্রেরকের নির্দেশ লঙ্ঘন— এ জন্য যদি প্রেরক নিজেই কিরানের অনুমতি দিয়ে দেয় তাহলে বক্তব্যের দাবী হল হজ্জটি সর্বসম্মতিক্রমেই প্রেরকের পক্ষ হতেই আদায় হয়ে যাবে। এটা হল কিরানের বিধান। আর যদি প্রেরিত ব্যক্তি উমরার সংযোজন তামাত্তুর পদ্ধতিতে করে থাকেন অর্থাৎ প্রেরণকারীর মীকাত হতে শুধু উমরার ইহরাম বেঁধে উমরা করে নেন অতঃপর মক্কা শরীফ হতে হজ্জের ইহরাম বাঁধেন তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে প্রেরণকারীর হজ্জ আদায় হবে না এবং প্রেরিতের ওপর অর্থ ফেরতের জরিমানা ওয়াজিব হবে।

নফল বদলী হজ্জ ও উমরার মাসআলা 

কোন ব্যক্তি যদি দয়া ও অনুগ্রহ হিসেবে নিজ অর্থ দ্বারা কারও পক্ষ হতে নফল বদলী হজ্জ ও নফল বদলী উমরা করে তাহলে এ ক্ষেত্রে উল্লেখিত শর্তাবলীর কোন পাবন্দী নেই। তবে প্রেরণকারীর অর্থ দ্বারা নফল বদলী হজ্জ ও নফল বদলী উমরা করা হলে উক্ত বিশটি শর্তের তিনটি- যা প্রেরণকারীর সত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত- সেগুলো প্রযোজ্য হবে না। তবে অবশিষ্ট শর্তাবলী যথারীতি বহাল থাকবে। অপ্রযোজ্য শর্ত তিনটি এই (ক) যার পক্ষ হতে হজ্জ করা হবে তার উপর হজ্জ ফরয হওয়া এবং নিজে তা পালন করতে অক্ষম হওয়া। (খ) অক্ষমতা স্থায়ী হওয়া। (গ) বদলী হজ্জ করানোর পূর্বেই অক্ষম হওয়া।

মাসআলা : উপর্যুক্ত শর্তাবলীর প্রতি লক্ষ্য রেখে যার পক্ষ হতে ফরয হজ্জ করা হবে বিশুদ্ধ প্রাধান্যপ্রাপ্ত মতানুযায়ী এই হজ্জ ও উমরাটি তার বলেই গণ্য হবে। আর হজ্জ ও উমরা পালনকারী তাকে সহযোগিতা করার সাওয়াব প্রাপ্ত হবে। হজ্জের কার্যাবলী সম্পাদনের পর প্রেরিত ব্যক্তি যদি তাওয়াফ বা উমরা করে তাহলে সেটা আবার তার নিজের পক্ষ হতেই হবে। অনুরূপভাবে নফল হজ্জ ও উমরার ক্ষেত্রেও প্রেরকের অর্থ দ্বারা করা হলে সেটা প্রেরকের বলে ধর্তব্য হবে আর হজ্জ উমরাকারী তার আমলের সাওয়াব লাভ করবে। অবশ্য কেউ যদি নিজ অর্থ দ্বারা নফল হজ্জ ও উমরা পালন করে এবং করার পর কাউকে তার সাওয়াব পৌছে দেয় তাহলে হজ্জ বা উমরাটি তার নিজের পক্ষ হতে হবে আর যাকে সাওয়াব পৌঁছাতে চায় সে সাওয়াব লাভ করবে।

মাসআলা : যে ব্যক্তি নিজের ফরয হজ্জ আদায় করেছে, তার জন্য নফল হজ্জ করার চেয়ে অন্য কারো পক্ষ হতে ফরয বদলী হজ্জ করে দেয়া উত্তম। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি অন্য কারও পক্ষ হতে বদলী হজ্জ করে দেয় সে সাতটি হজ্জের সাওয়াব লাভ করে। 

নিজের হজ্জ করেনি এমন ব্যক্তি দ্বারা বদলী হজ্জ করানো 

ফরয বদলী হজ্জ এমন ব্যক্তিকে দিয়ে করানো উত্তম ও উচিত যিনি নিজের ফরয হজ্জ আদায় করেছেন- এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরাম সকলেই একমত। আর যিনি নিজের হজ্জ পালন করেননি এবং তার ওপর হজ্জ করা ফরযও হয়নি তাকে দিয়ে বদলী হজ্জ করানো জায়েয আছে। তবে তা মাকরূহে তানযীহী অর্থাৎ অনুত্তম। পক্ষান্তরে যার নিজের ওপরই হজ্জ ফরয হয়ে আছে এবং এখনো তা আদায় করেনি এমন ব্যক্তিকে বদলী হজ্জে পাঠানো মাকরূহে তাহরীমী অর্থাৎ নাজায়েয।

যার ওপর হজ্জ ফরয ছিল না, সে যদি কারও পক্ষ হতে বদলী হজ্জে গিয়ে প্রেরকের পক্ষ থেকে ইহরাম বেঁধে মক্কা শরীফে প্রবেশ করে, তাহলে বাইতুল্লাহর নিকটে পৌঁছার কারণে তার যিম্মায় নিজের হজ্জ ফরয হবে না। কারণ সে তো এ অবস্থায় মক্কায় পৌঁছেছে যে, অন্যের পক্ষ থেকে ইহরাম বাঁধার কারণে সে তার নিজের হজ্জ করতে সক্ষম নয়। আর দেশে ফেরার পর গরীব হওয়ার কারণে পুনরায় মক্কায় যাওয়ার সামর্থ্যও তার নেই। তবে কিছু সংখ্যক উলামায়ে কেরামের মতে, যদিও এ ব্যক্তির যিম্মায় আগে হজ্জ ফরয ছিল না কিন্তু বাইতুল্লাহ দর্শনের ফলে তার ওপর হজ্জ ফরয হয়ে গিয়েছে। কাজেই তাদের মতে এ ব্যক্তির জন্য জরুরী হল, সে সারা বছর সেখানেই অবস্থান করবে এবং পরবর্তী বছর নিজের হজ্জ আদায় করে তবেই দেশে ফিরবে। তবে বর্তমানে যেহেতু সেখানে এত দীর্ঘ অবস্থানের অনুমতি ও বন্দোবস্ত কোনটিই সম্ভব নয়। এজন্য প্রথমোক্ত মতের ওপর আমল করা যেতে পারে এবং দলীল প্রমাণের আলোকে এ মতটিকেই অগ্রাধিকারযোগ্য মনে হয়। 

হজ্জ করানেওয়ালার দেশ বা শহর থেকে বদলী হজ্জ করানোর বিধান

হজ্জ করানেওয়ালার দেশ বা শহর থেকে বদলী হজ্জ করানোর শর্ত তখনই প্রযোজ্য হবে যখন ওসিয়তকারীর রেখে যাওয়া পূর্ণ সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ দ্বারা তার আবাসভূমি থেকে হজ্জ করানো সম্ভব হয়। পক্ষান্তরে যদি এক-তৃতীয়াংশ দ্বারা তা সম্ভব না হয় এবং ওয়ারিশগণও এক-তৃতীয়াংশের অতিরিক্ত খরচ করতে সম্মত না হয় তাহলে এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ দ্বারা যেখান থেকে হজ্জ করানো সম্ভব হয় সেখান থেকেই হজ্জ করিয়ে দিবে। অনুরূপভাবে ওসিয়তকারী নিজেই যদি তার আবাসভূমি ব্যতীত অন্যত্র থেকে বদলী হজ্জ করানোর কথা বলে যায় তাহলে দায়িত্বশীলগণ তার বর্ণিত স্থান থেকেই হজ্জ করিয়ে দিবে। 

বদলী হজ্জে কিরান এবং তামাত্তু হজ্জ করার বিধান 

বদলী হজ্জের ক্ষেত্রে যদিও দলীল প্রমাণের আলোকে হজ্জ করানেওয়ালার অনুমতি সাপেক্ষে কিরান এবং তামাত্তু উভয় হজ্জ করার বৈধতার প্রাধান্য অনুমিত হয়। কিন্তু এর বিপরীতেও নির্ভরযোগ্য উলামায়ে কেরামের ফাতাওয়া রয়েছে। অর্থাৎ তাদের মতে তামাত্তু হজ্জ করা হজ্জ করানেওয়ালার অনুমতি সাপেক্ষেও বৈধ নয়। তো ব্যাপার যেহেতু ফরয নিয়ে তাই সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। এজন্য যদ্দুর সম্ভব বদলী হজ্জে ইফরাদ বা কিরান করবে: তামাত্তু করবে না। কিন্তু বর্তমানে হজ্জ-উমরা করার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের এই স্বাধীনতা নেই যে, সে নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী যখন যেখানে খুশি যাতায়াত করতে পারে এবং দীর্ঘ ইহরাম এড়ানোর জন্য হজ্জের দিনগুলোর একেবারে নিকটবর্তী সময়ে সফর করতে পারে। সর্বক্ষেত্রেই সরকারী কঠিন বিধি- নিষেধ তার পিছু লেগে আছে। এজন্য যদি কোন বদলী হজ্জকারী হজ্জের অনেক পূর্বে সফর করতে বাধ্য হয় এবং দীর্ঘ ইহরামকালীন নিষিদ্ধ কাজসমূহ থেকে বেঁচে থাকা কঠিন মনে করে তাহলে প্রেরকের সম্মতি নিয়ে তার জন্য তামাত্তু হজ্জ করারও অবকাশ রয়েছে। (আল্লাহ তা'আলাই সর্ব বিষয়ে সর্বাধিক জ্ঞাত।)

বদলী হজ্জের জরুরী খরচাদি

বদলী হজ্জের প্রয়োজনীয় সকল খরচাদি যথা- যাতায়াত, প্রয়োজন মাফিক অবস্থান, হজ্জের দিনসমূহের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, খানা-পিনার জরুরী সামানা, কাপড় পরিষ্কারের ব্যয়, থাকার জন্য ঘর বা তাঁবু ইত্যাদি— এই সব কিছুর ব্যয় নির্বাহ যিনি বদলী হজ্জ করাচ্ছেন তার দায়িত্বে। ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞগণ এ সকল খাতের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। তবে যুগের পরিবর্তনে প্রয়োজনও বদলে যায়। এজন্য বদলী হজ্জে গমনকারী ব্যক্তির উচিত হল, সতর্কতার সঙ্গে এ জাতীয় প্রয়োজনগুলো নির্ধারণ করা এবং এ সকল খাতে অপব্যয় ও অতি সংকোচন ব্যতীত মধ্যপন্থায় ব্যয় নির্বাহ করা। হাজী সাহেবদের ব্যয়ের এমন কিছু খাতও রয়েছে, যে সব খাতে বদলী হজ্জ করানেওয়ালার অর্থ ব্যয় করা বৈধ নয়। বরং সে সকল খাতে হাজী সাহেবকে নিজ অর্থ ব্যয় করতে হবে। উদাহরণত উযূ-গোসলের পানির মূল্য ও চিকিৎসা ব্যয় হাজী সাহেবের নিজ অর্থ থেকে সম্পাদন করতে হবে। অনুরূপভাবে কাউকে তার খানা-পিনায় শরীক করা, কাউকে মেহমানদারী করা তাকে নিজ অর্থ হতেই আঞ্জাম দিতে হবে। তবে বদলী হজ্জে প্রেরণকারী যদি হাজী সাহেবকে এ জাতীয় মামুলী ব্যাপারে উদারতার সঙ্গে ব্যয় করার অনুমতি দিয়ে দেন- এবং হাজী সাহেবকে পেরেশানী থেকে বাঁচানোর জন্য এভাবে অনুমতি দেয়া উচিতও বটে- তাহলে হাজী সাহেব এ সকল ব্যয়ও বদলী হজ্জ করানেওয়ালার অর্থ হতে নির্বাহ করতে পারবে।

ইহরামের কাপড় এবং সফরে ব্যবহার্য আসবাবপত্র হজ্জ করানেওয়ালার অর্থ দ্বারা ক্রয় করা বৈধ। কিন্তু হজ্জ সমাপনের পর এ সকল আসবাব এবং বেঁচে যাওয়া অর্থ হজ্জ করানেওয়ালাকে কিংবা তার ওয়ারিশদেরকে ফেরত দিতে হবে। হাজী সাহেব যদি এসব সামানা ও বেঁচে যাওয়া অর্থ তার মালিকানায় অন্তর্ভুক্তির শর্তও করে থাকেন তবু তা ধর্তব্য হবে না; মালিককে ফেরত দিয়ে দিতে হবে। তবে যিনি হজ্জ করাচ্ছেন তিনি যদি এ সব সামানা ও বেঁচে যাওয়া অর্থ হাজী সাহেবের জন্য হাদিয়া বলে ব্যক্ত করেন কিংবা এগুলো হাজী সাহেবের মালিকানায় অন্তর্ভুক্ত হবে বলে ওসিয়ত করে যান সেক্ষেত্রে ফেরত দেয়া জরুরী নয়।

হজ্জের সফরে হাজী সাহেবকে পথিমধ্যে কোথাও অবস্থান করতে হলে কিংবা হজ্জের পূর্বে এবং মক্কা বা মদীনায় যানবাহনের যাত্রা বা তাতে আসন পাওয়ার প্রতীক্ষায় কিছু সময়/দিন/মাস অবস্থান করতে হলে, এ অবস্থানকালীন সময়ের খরচাদি হজ্জ করানেওয়ালার অর্থ হতে গ্রহণ করা হবে। চাই এ অবস্থান পনেরো দিনের কম হোক বা বেশি। তবে হাজী সাহেব যদি নিজ প্রয়োজনে কোথাও অতিরিক্ত সময় অবস্থান করেন তাহলে সে সময় বা দিনগুলোর খরচাদি তার নিজ অর্থ থেকে করতে হবে।

হজ্জ করানেওয়ালা যদি হাজী সাহেবকে তৃতীয় শ্রেণির যানবাহনে সফর করার খরচ দিয়ে থাকেন আর হাজী সাহেব প্রথম কিংবা দ্বিতীয় শ্রেণির যানবাহনে সফর করেন অথবা আরও উন্নত কোন যানবাহন ব্যবহার করেন তাহলে অতিরিক্ত ব্যয় হাজী সাহেবকে তার নিজ অর্থ থেকে নির্বাহ করতে হবে।

সংগ্রহ : জাওয়াহিরুল ফিকহ ৪/২০৩-২২৭

যাকারিয়া বুক ডিপো, দেওবন্দ।

অনুবাদ : মাওলানা আবূ সাইম

ইমাম,বছিলা বড় মসজিদ, মুহাম্মদপুর, ঢাকা।
পূর্ববর্তী পোষ্ট পরবর্তী পোষ্ট
coinpayu
coinpayu
coinpayu
coinpayu