হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) এর জীবনী ২০২৪
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ)
ত্ববকা (রিজাল শাস্ত্রে রাবীর অবস্থান): সাহাবী
বয়স কম হওয়ার কারণে তিনি বদর ও উহুদের যুদ্ধে শরীক হতে পারেননি। অতঃপর খন্দকের যুদ্ধকালে তার বয়স ১৫ বছর হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের অনুমতি দান করেন।
তিনি অত্যন্ত মুত্তাকী-পরহেযগার ও দুনিয়াবিমুখ সাহাবী ছিলেন। সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ. বলেন, আমি যদি কারও সম্পর্কে জান্নাতী হওয়ার সাক্ষ্য দিতাম তবে অবশ্যই ইবন উমর সম্পর্কে দিতাম। তিনি যখন ইন্তিকাল করেন তখন তিনিই ছিলেন জীবিতদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। তাউস রহ. বলেন, আমি ইবন উমর অপেক্ষা বেশি পরহেযগার কাউকে দেখিনি।
একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন- ان عبد الله رجل صالح আব্দুল্লাহ একজন ভাল লোক'।
একবার তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন, দুজন ফিরিশতা তাঁকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। তিনি জাহান্নাম থেকে বলে ওঠেন, আমি জাহান্নাম থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি। ঠিক এসময় এক ফিরিশতা তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং তাঁকে লক্ষ্য করে বলেন, ভয় করো না। তিনি এ স্বপ্ন তাঁর বোন উম্মুল মুমিনীন হযরত হাফসা রাযি.- এর কাছে বর্ণনা করেন। হযরত হাফসা রাযি. তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানালে তিনি বললেন - نعم الرجل عبد الله لو كان يصلي من الليل আব্দুল্লাহ বড় ভালো লোক, যদি সে রাত্রে নামায পড়তো!'। এরপর থেকে তিনি রাতে খুব কমই ঘুমাতেন।
তিনি অত্যন্ত দুনিয়াবিমুখ ছিলেন। দুনিয়ার অর্থসম্পদ ও পদের লোভ-লালসা তাঁকে স্পর্শ করতে পারত না। হযরত উছমান রাযি. তাঁকে বিচারক নিযুক্ত করতে চাইলে তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। মাইমূন রহ. বলেন, আমি একবার ইবন উমরের ঘরে ঢুকেছিলাম। আমি লক্ষ করে দেখলাম, তাঁর ঘরে যা-কিছু আছে সবটার মূল্য একহাজার দিরহামও হবে না।
তাঁর অন্তরে আল্লাহর ভয় ছিল প্রচণ্ড। তিনি তাবিঈ উবায়দ ইবন উমায়েরের ওয়াজের মজলিসে বসতেন। তখন দেখা যেত, তাঁর ওয়াজ শুনে তিনি অঝোরধারায় কাঁদছেন। একবার উবায়দ ইবন উমায়ের রহ. তিলাওয়াত করছিলেন, فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ (‘সুতরাং (তারা ভেবে দেখুক) সেইদিন (তাদের অবস্থা) কেমন হবে,যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব।) তখন তিনি এমনভাবে কাঁদতে থাকেন যে, তাঁর দাড়ি এবং জামার সামনের অংশ ভিজে একাকার হয়ে যায়। এ অবস্থা দেখে এক ব্যক্তি উবায়দকে বলতে চাইল, আপনি থামুন। আপনি শায়খকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছেন।
তিনি নিজে কুরআন তিলাওয়াতকালে যখন পাঠ করতেন- أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آمَنُوا أَنْ تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ (যারা ঈমান এনেছে, তাদের জন্য কি এখনও সেই সময় আসেনি যে, আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তাদের অন্তর বিগলিত হবে?), তখন তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন।
তিনি অতিবড় দানশীল ছিলেন। নিজ মালিকানাধীন কোনও সম্পদ পসন্দ হয়ে গেলে তা আল্লাহর পথে দান করে দিতেন। সর্বমোট এক হাজার গোলাম আযাদ করেছেন। সাধারণত ইয়াতীম ছাড়া একাকী খানা খেতেন না। একই মজলিসে ত্রিশ হাজার দিরহামও দান করেছেন বলে জানা যায়। একবার চল্লিশ হাজার দিরহামে এক গোলাম কিনেছিলেন। পরে তাকে আযাদ করে দেন। গোলাম তখন বলে ওঠে, আপনি আমাকে আযাদ করেছেন। এখন কী খেয়ে বাঁচব? তখন তাকে চল্লিশ হাজার দিরহাম অনুদান দেন। তাঁর এ জাতীয় বহু ঘটনা বর্ণিত আছে।
তিনি অত্যন্ত সংযতবাক ছিলেন। কখনও অশ্লীল ও রূঢ় শব্দ ব্যবহার করতেন না। একবার কোনও কারণে গোলামকে লা'নত করতে ইচ্ছা হল। তিনি বললেন- اللهم الع তিনি العن শব্দটি পূর্ণ করলেন না। তারপর তিনি বললেন, এটা এমনই এক শব্দ যা বলতে আমি পসন্দ করি না। একবার নিজ বাড়ি আসার পথে এক ব্যক্তি তাঁকে গালমন্দ করছিল। তিনি একদম নীরব। যখন বাড়ির দরজায় পৌঁছলেন, তখন সেই ব্যক্তির দিকে ফিরে বললেন, দেখ, আমি ও আমার ভাই আসেম কোনও মানুষকে গালি দেই না ।
তিনি প্রত্যেক নামায নতুন ওযূ দ্বারা পড়তেন। একজন ফকীহ ও মুফতী হিসেবেও তিনি স্বীকৃত ছিলেন। হজ্জের বিধানবলী সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান ছিল সর্বাপেক্ষা বেশি। তিনি সর্বমোট সাতবার হজ্জ ও এক হাজার বার উমরা করেছেন। তিনি হিজরী ৭৩ সালে মক্কা মুকাররামায় ইন্তিকাল করেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের সময় তাঁর বয়স ছিল ২২ বছর। যূ-তুওয়া নামক স্থানে মুহাজিরদের মাকবারায় তাকে সমাহিত করা হয়। তার সূত্রে ১৬৩০টি হাদীছ বর্ণিত আছে।
নোট
মোট বর্ণনার সংখ্যাঃ 2851 আবাসস্থলঃ মক্কা মৃত্যুস্থানঃ মক্কা