coinpayu

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. এর জীবনী

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. 

মৃত্যুসন: ৫৭/৫৮/৫৯ হিজরী
ত্ববকা (রিজাল শাস্ত্রে রাবীর অবস্থান): সাহাবী

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি.-এর মূল নাম আব্দুর রহমান ইবন সাখর। ইসলাম গ্রহণের আগে তাঁর নাম ছিল 'আব্দ শাম্‌ছ'। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা পরিবর্তন করে নতুন নাম রাখেন আব্দুর রহমান। এক বর্ণনায় আছে 'আব্দুল্লাহ'। তবে তিনি 'আবূ হুরায়রা' উপনামেই পরিচিত। আবূ হুরায়রা অর্থ বিড়ালওয়ালা। এ উপনামের কারণ সম্পর্কে তিনি বর্ণনা করেন, একদা আমার জামার আস্তিনের ভেতর একটি 'হিররা' অর্থাৎ বিড়াল রেখেছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ওটা কি? বললাম, হিররা। তখন তিনি বললেন, তুমি আবূ হুরায়রা। 'হুরায়রা' শব্দটি 'হিররা' -এর কোমল রূপ।

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. ইয়ামানের বিখ্যাত দাওস গোত্রের লোক। তিনি গরীব পরিবারের সন্তান ছিলেন। শৈশবেই পিতৃহারা হন। জীবিকা নির্বাহের জন্য বুসরা বিনতে গাযওয়ানের ভৃত্যরূপে কাজ করতেন। পরবর্তীকালে তিনি বলতেন, আমি বুসরা বিনতে গাযওয়ানের পরিবারে কাজ করতাম। তারা যখন উটে চড়ে কোথাও যেত, আমি উটের রশি ধরে আগে আগে হাঁটতাম। আর যখন তারা কোথাও যাত্রা বিরতি দিত, তখন আমি তাদের খেদমত করতাম। আল্লাহর কী মহিমা, আজ সেই বুসরা বিনতে গাযওয়ান আমার স্ত্রী!

তিনি ৭ম হিজরীতে ইসলাম গ্রহণ করেন। তারপর মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরত করেন। পথে তিনি কবিতা আবৃত্তি করছিলেন-


يَا لَيْلَةً مِنْ طُولِهَا وَعَنَائِهَا * عَلَى أَنَّهَا مِنْ دَارَةِ الْكُفْرِ نَجَّتْ


"আহা! এ রাত কতই না দীর্ঘ, কত ক্লান্তিকর

তবে সুখের কথা, এ রাত আমাকে কূফরের নিবাস থেকে মুক্তি দিয়েছে।

তাঁর সঙ্গে তাঁর একটি গোলাম ছিল। কোনও এক ফাঁকে সেটি পালিয়ে যায়। তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌঁছে যখন তাঁর হাতে বাই'আত গ্রহণ করেন, কিভাবে যেন গোলামটি সেখানে উপস্থিত হয়ে গেল। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুশি হয়ে তাঁকে বললেন, হে আবূ হুরায়রা! এই যে তোমার গোলাম। তিনি বললেন, সে আল্লাহর ওয়াস্তে মুক্ত। এই বলে তিনি তাকে আযাদ করে দিলেন।

তিনি যখন মদীনা মুনাওয়ারার উদ্দেশে যাত্রা করেন, তখন খায়বারের যুদ্ধ চলছিল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌঁছার আগেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। তা সত্ত্বেও তিনি তাঁকে গনীমতের অংশ দিয়েছিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ত্রিশ বছরের কিছু বেশি। নিজে ইসলাম গ্রহণের পর তিনি মনেপ্রাণে কামনা করেন, যেন তাঁর মা'ও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতে সাড়া দেন।

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি.-এর মায়ের নাম মায়মুনা বিনতে সাবীহ। হযরত আবূ হুরায়রা রাযি, তাকে ইসলামের দিকে ডাকতে থাকেন। কিন্তু তাঁর মা কোনওক্রমেই বাপ-দাদা থেকে পাওয়া পৌত্তলিক ধর্ম ছাড়তে রাজি হচ্ছিলেন না। শেষে তিনি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে অনুরোধ করেন, তিনি যেন তাঁর মায়ের হিদায়াতের জন্য আল্লাহর কাছে দু'আ করেন। তিনি দু'আ করলেন, হে আল্লাহ! আবু হুরায়রার মা'কে হিদায়াত দান করুন।

আল্লাহ তা'আলা তাঁর দু'আ কবুল করেন। সুতরাং সেদিনই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হিদায়াতের সংবাদ শুনে খুব খুশি হলেন। তারপর দু'আ করলেন, হে আল্লাহ! তোমার এই বান্দা আবূ হুরায়রা ও তাঁর মা'কে তোমার মু'মিন বান্দাদের কাছে প্রিয় করে দাও এবং তাদেরকেও এ দু'জনার কাছে প্রিয় করে তোল।

হযরত আবু হুরায়রা রাযি, নিতান্তই গরীব ছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি সর্বক্ষণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সান্নিধ্যে কাটাতে থাকেন। কোনওমতে খেয়ে না খেয়ে মসজিদে নববী-সংলগ্ন সুফ্ফায় (চবুতরা, রোয়াক) অবস্থান করতেন। অনেক সময় ক্ষুধার যন্ত্রণায় পেটে পাথর বেঁধে রাখতেন। কখনও মাটিতে পেট চেপে পড়ে থাকতেন। এমনও হত যে, অসহ্য ক্ষুধায় বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেছেন আর লোকে মনে করেছে তিনি মৃগীরোগে আক্রান্ত। তিনি ইশারায় পেট দেখিয়ে দিতেন এবং বোঝাতেন যে, কোনও রোগ নয়; বরং আমার এ অবস্থা ক্ষুধার কারণে। এ সম্পর্কিত অনেক ঘটনা হাদীছ গ্রন্থসমূহে বর্ণিত আছে।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী সংরক্ষণে তার আগ্রহ ছিল বিপুল। তাঁর একমাত্র ধ্যানজ্ঞান ছিল হাদীছ শেখা ও তা সংরক্ষণ করা। এ উদ্দেশ্যে তিনি সর্বক্ষণই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সঙ্গে থাকতেন। দীর্ঘ চার বছর তিনি তাঁর সাহচর্যে কাটিয়েছেন। তিনি যতক্ষণ বাড়িতে থাকতেন তাঁর খেদমত করতেন আর যখন যুদ্ধাভিযানে বের হতেন, তখন একজন মুজাহিদরূপে তাতে শরীক হতেন, যাতে কোনও হাদীছ অর্থাৎ তাঁর কথা ও কাজ তার অগোচরে না থেকে যায়।

একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আবূ হুরায়রা! তোমার সাথী-সঙ্গীগণ আমার কাছে গনীমতের অংশ চায়। কই, তুমি যে কখনও তা চাও না? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি চাই আল্লাহ যে 'ইলম আপনাকে দান করেছেন তা থেকে আমাকে শিক্ষা দেবেন। তখন তিনি আমার পিঠ থেকে একটা চাদর টেনে নিলেন এবং সেটি তাঁর ও আমার মাঝখানে বিছালেন। এমনভাবে বিছালেন যে, আমি দেখছিলাম তার ওপর দিয়ে পিঁপড়া হেঁটে যাচ্ছে। তারপর তিনি আমাকে হাদীছ শোনাতে থাকলেন। যখন আমি তাঁর হাদীছ পরিপূর্ণরূপে গ্রহণ করলাম তখন বললেন, এ চাদরটা জমা কর এবং তোমার সঙ্গে মিলিয়ে নাও। আবূ হুরায়রা রাযি. বলেন, এরপর এমন হল যে, তিনি আমার কাছে যা বর্ণনা করেছেন। তার একটি হরফও কখনও ভুলিনি।

কখনও কোনও হাদীছ ভুলে গেলে তাঁর খুব দুঃখ হত। এজন্য একদিন তিনি আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আ করেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এমন ‘ইলম চাই, যা কখনও ভুলব না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর এ দু'আ শুনে বললেন, আমীন। নিশ্চয়ই এ দু'আ কবুল হয়েছিল। ফলে তিনি যে 'ইলম শিখেছিলেন। তা কখন ভোলেননি।

জীবনভর তিনি মানুষের মধ্যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছ প্রচার করে গেছেন। হাজার হাজার হাদীছ তিনি শুনিয়েছেন। তারপরও তিনি বলেন, আবূ হুরায়রার কাছে হাদীছের এমন এমন থলি আছে, যা আজও পর্যন্ত সে খোলেনি। তাহলে কত হাদীছ তিনি জানতেন? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সনদ দেন যে,


أَبُو هُرَيْرَةَ وِعَاءٌ مِنَ الْعِلْمِ


“আবূ হুরায়রা 'ইলমের পুটলি।”


নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিটি কথা তিনি অক্ষরে অক্ষরে মনে রাখতে পেরেছিলেন। এটা ইতিহাসের এক বিস্ময়। কারও রাশি রাশি কথা অক্ষরে অক্ষরে মনে রাখার এমন নজির মানবেতিহাসে নেই। প্রকৃতপক্ষে এটা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি মু'জিযা।

তাঁর সূত্রে ৫ হাজার ৩৭৪টি হাদীছ বর্ণিত আছে।

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছ আমিই সবচে' বেশি জানি। আল্লাহর কসম! অনেকেই তাঁর সাহচর্যে আমার আগে এসেছে। তা সত্ত্বেও তারা আমার কাছে হাদীছ জিজ্ঞেস করত। কারণ তারা জানে, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহচর্যে তাদেরচে' বেশি সময় কাটিয়েছি। এমনকি হযরত উমর রাযি. উছমান রাযি. 'আলী রাযি. তালহা রাযি. ও যুবায়র রাযি, পর্যন্তও আমার কাছে হাদীছ জিজ্ঞেস করত।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছ সম্পর্কে তাঁর জ্ঞানবত্তার কথা অপরাপর সাহাবীগণও স্বীকার করতেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন 'উমর রাযি. একদিন তাঁকে লক্ষ্য করে বলেন, আমাদের মধ্যে আপনিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহচর্যে সবচে' বেশি থাকতেন আর তাঁর হাদীছও আপনিই সকলের চেয়ে বেশি জানেন। আরেকবার তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং তিনি যা বর্ণনা করেন সে সম্পর্কে আমারচে' বেশি জ্ঞানী।

একবার এক ব্যক্তি হযরত তালহা ইবন 'উবায়দুল্লাহ রাযি.-কে লক্ষ্য করে বলল, হে আবূ মুহাম্মাদ! এই যে ইয়ামানী লোকটি, অর্থাৎ হযরত আবূ হুরায়রা রাযি, ইনি কি আপনাদের চেয়ে হাদীছ বেশি জানেন? অনেক সময় তাঁর কাছ থেকে এমন এমন হাদীছ শুনতে পাই, যা আপনাদের কাছে শুনি না। এর কারণ কী? তিনি বললেন, এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, তিনি এমন অনেক হাদীছ শুনেছেন, যা আমরা শুনিনি। এর কারণ আমাদের ঘর-বাড়ি ছিল, ছাগলের পাল ছিল এবং ছিল কাজকর্ম। তাই আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসতাম সকালে ও বিকালে। কিন্তু আবূ হুরায়রা রাযি, ছিলেন একজন মিসকীন লোক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেহমানরূপে সর্বক্ষণ তাঁর দরজায় পড়ে থাকতেন। সর্বক্ষণ তার হাত তাঁর হাতে থাকত। কাজেই এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, তিনি এমন অনেক হাদীছ শুনেছেন যা আমরা শুনিনি।

একজন শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ হওয়ার পাশাপাশি তিনি ছিলেন ফকীহ ও মুজতাহিদ এবং ছিলেন দীনী ইলমের ইমাম। সাহাবায়ে কিরামের আমলে যারা দীনী বিষয়ে ফাতওয়া দেওয়ার কাজ করতেন, তিনিও তাদের একজন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন 'আব্বাস রাযি.-এর মত ইলমের দিকপালও ফাতওয়ার ব্যাপারে তাঁর প্রতি আস্থা রাখতেন। একবার একটা জটিল বিষয়ে সমাধানের জন্য তাদের মতামত চাওয়া হলে হযরত ইবন 'আব্বাস রাযি. বললেন, ফাতওয়া দিন হে আবূ হুরায়রা। তিনি ফাতওয়া দিলেন এবং সকলে তাতে সন্তোষ প্রকাশ করলেন।

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি, একজন অতিথিপরায়ণ লোক ছিলেন। মেহমান আসলে তিনি খুব খুশি হতেন এবং সাধ্যমত তাদের সেবাযত্ন করতেন। তফাবী রহ. বলেন, আমি একবার মদীনায় ৬ মাস যাবৎ আবূ হুরায়রা রাযি.-এর মেহমান হয়ে থাকি। আমি সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে তারচে' বেশি অতিথিপরায়ণ কাউকে দেখিনি।

তিনি অত্যন্ত মুত্তাকী, পরহেযগার ও আল্লাহভীরু লোক ছিলেন। 'ইবাদত-বন্দেগীর ভেতর দিয়েই সময় পার করতেন। আবূ উসমান নাহদী রহ. বলেন, আমি একবার এক সপ্তাকাল যাবৎ আবূ হুরায়রা রাযি.-এর মেহমান হই। তখন দেখেছি তিনি, তাঁর স্ত্রী ও খাদেম সারারাত পালাক্রমে 'ইবাদত-বন্দেগী করতেন। তাঁরা রাতকে তিনভাগে ভাগ করে নিয়েছিলেন। তাঁদের একেকজন একেক ভাগে ইবাদত করতেন, বাকিরা বিশ্রামে থাকতেন। যার 'ইবাদতের সময় শেষ হত, সে অন্যকে জাগিয়ে দিতেন এবং নিজে বিশ্রাম করতেন। ইকরিমা রহ. বর্ণনা করেন, হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. রোজ বারো হাজার বার তাসবীহ পড়তেন। তিনি বলতেন, আমি তাসবীহ পড়ি আমার দিয়াত পরিমাণ। তাঁর কাছে একটি রশি থাকত, যাতে দুই হাজার গিরা ছিল। তিনি সেটি দিয়ে তাসবীহ পড়তেন। তা শেষ না করে ঘুমাতেন না।

তিনি প্রত্যেক মাসের শুরুতে তিনটি রোযা রাখতেন। তাছাড়া প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবারও রোযা রাখতেন।

হযরত উমর রাযি, তাঁকে বাহরাইনের গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি দক্ষতার সঙ্গে সে দায়িত্ব পালন করেন। পরে আরও একবার তাঁকে সে দায়িত্বে নিযুক্ত করতে চাইলে তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। হযরত উমর রাযি. বললেন, তুমি পদ নিতে অপসন্দ কর, অথচ তোমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি পদ চেয়ে নিয়েছিলেন। হযরত আবু হুরায়রা রাযি, বললেন, তিনি তো ছিলেন আল্লাহর নবী ইউসুফ, যার বাবা নবী ছিলেন, দাদা নবী ছিলেন এবং পরদাদা ও নবী ছিলেন। আর আমি হলাম আবু হুরায়রা ইবন উমায়া।

হযরত মুআবিয়া রাযি.-এর আমলে একবার তিনি মদীনা মুনাওয়ারার ভারপ্রাপ্ত গভর্নর নিযুক্ত হয়েছিলেন।

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি, অত্যন্ত নম্র স্বভাবের লোক ছিলেন। সাদামাঠা চলাফেরা করতেন। মানুষের সঙ্গে অকৃত্রিমভাবে মেলামেশা করতেন। তাঁর অন্তরে আল্লাহর ভয় ছিল অতি প্রবল।

তিনি তাঁর কন্যাকে বলতেন, কখনও স্বর্ণের অলংকার পরবে না। আমি ভয় করি, তা পরলে জাহান্নামের আগুন তোমাকে স্পর্শ করবে। এটা তাঁর আল্লাহভীতির পরিচায়ক। মহিলাদের জন্য স্বর্ণালংকার পরা নাজায়েয নয়। তা সত্ত্বেও তিনি পসন্দ করেননি, পাছে এ কারণে মনে অহংকার জন্ম নেয়। মৃত্যুর আগে যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন খুব কান্নাকাটি করছিলেন। কেউ জিজ্ঞেস করল, আপনি কাঁদছেন কী কারণে? তিনি বলেছিলেন, আমি তোমাদের এ দুনিয়ার কারণে কাঁদছি না; বরং আমি কাঁদছি এ কারণে যে, আমার সফর অনেক দূরের, কিন্তু পাথেয় বড় কম। আমি একটি উঁচু স্থানে অবস্থান করছি। এখান থেকে নামতে হবে- হয় জান্নাতে, নয়তো জাহান্নামে। আমি জানি না কোথায় গিয়ে আমি পৌঁছব। মৃত্যুর আগে তিনি অসিয়ত করেছিলেন, আমার মৃত্যুর পর তোমরা বিলাপ করে কাঁদবে না। আমার দাফন-কাফন তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করবে। আমার কবরের ওপর তাঁবু টানাবে না।

তিনি ৫৭ হিজরী সালে 'আকীকে নিজ বাড়িতে ইন্তিকাল করেন। সেখান থেকে তাঁকে মদীনা মুনাওয়ারায় নিয়ে আসা হয়। ওয়ালীদ ইবন 'উকবা তাঁর জানাযা পড়ান, যিনি তখন মদীনার গভর্নর ছিলেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন 'উমর ও আবূ সা'ঈদ খুদরী রাযি, জানাযায় হাজির ছিলেন। জান্নাতুল বাকী'তে তাঁকে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

পূর্ববর্তী পোষ্ট পরবর্তী পোষ্ট
coinpayu
coinpayu
coinpayu
coinpayu